পোবনিউজ২৪.নেট ঢাকা, জানুয়ারি ২০, ২০২১ : বাংলাদেশে সরকারী দলের নাম ভাঙিয়ে ভুমিদস্যুরা সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি জবর দখল করে চলছে। থানাগুলোতে হাজার হাজার জিডি, মামলা থাকলেও প্রভাবশালী ভুমি দস্যুদের কাছে আইন আদালত সব জিম্মী হয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট দাবী করেছে। জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও একটি স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনটি বলেছে, সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দু ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন রোধ এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। নেতৃবৃন্দ আশা করেন, সরকার চলতি অধিবেশনে বিল পাস করে এসব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করবে।
নেতৃবৃন্দ জানান, ঢাকার অদুরে সাভার উপজেলার আশুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীখন্ডিয়া এলাকা তন্মধ্যে অন্যতম। অত্র ইউনিয়নের সাবেক একজন মেম্বর আওয়ামীলীগের ছত্র-ছায়ায় এলাকায় দখলের রাজত্ব কায়েম করেছে। আশুলিয়া থানার এক শ্রেনীর পুলিশ ও সাভারের কতিপয় সাংবাদিকের কারণে সে এত দুঃসাহস পাচেছ বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার সাধারণ জনগণ এই চক্রের দাপটে প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়েছে। এলাকাবাসী ওই মেম্বরের কাছে জিম্মী হয়ে গেছে। একটি সুত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক একজন মহাপরিচালক ও নেপথ্যে ওই দস্যুদের ব্যবহার করে নিরীহ জনগণের জমি দখল করছে। ইতিপুর্বে দোকানদার আলমগীরকে জমি সংক্রান্ত কারনে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে হত্যা করা হয়। যার কোন মামলা আশুলিয়া থানায় করতে দেয়নি ওই চক্র।
বরিশালের উজিরপুর থানার সাউতা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ফ্রান্সিস বারৈইযের ভিটাবাড়িসহ ক্রয়কুত জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় মন্জুর নেতৃতে একটি ভুমি দস্যু চক্র। এই চক্রের অন্যতম সহযোগী এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান।
বুধবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, কেন্দ্রীয় নেতা প্রদীপ কুমার পাল, অ্যাডভোকেট প্রদীপ সরকার, অ্যাডভোকেট লাকি বাছার, অ্যাডভোকেট সুজয় ভট্টাচার্য, প্রদীপ চন্দ্র, সরল কুমার রায়, চয়ন বাড়ৈ, সাগরিকা মন্ডল, সাজেন কৃষ্ণ বল, সজীব কুন্ডু মৌসুমি রায় প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বিদায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, এ সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৪৯ জনকে হত্যা, হত্যার হুমকি ২০১ জন, হত্যাচেষ্টা ১৪৬ জন, জখম ও আহত করা হয়েছে সাত হাজার ৩৭ জনকে এবং নিখোঁজ হয়েছেন ৬১ জন। সেইসঙ্গে চাঁদাবাজি হয়েছে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ২৪৪টি, ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৩২২ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৪৫৪টি। অগ্নিসংযোগ ১১৬টি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০১টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভূমি দখল হয়েছে ১০ হাজার একর, যার মধ্যে চাক, ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের আট হাজার ২০০ একর এবং এবং হিন্দুদের দুই হাজার ২৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, দেশে প্রতিনিয়তই হিন্দু নির্যাতন বাড়ছে। ২০১৫ সালের তুলনায় গত পাঁচ বছরে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে কয়েক গুণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেনি। বর্তমান সরকারের আমলেও সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী অপরাধীদের একজনও শাস্তি পায়নি। এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করলেও সরকার দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। যে কারণে দিন দিন হিন্দু নির্যাতন বেড়েই চলেছে।
গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামানিক এই প্রতিনিধিকে বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র । দু দেশের সরকারের মধ্যে সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে আমরা ভারত সরকারের কোন সহযোগিতা পাযনি। আমরা বহুবার ঢাকাস্থ ভারতীয় দুতাবাসকে জানিয়েছি। তারা মন্দিরগুলোকে অনুদান দিচেছ। আমার প্রশ্ন যদি হিন্দুই না থাকে তা হলে অনুদানের প্রশ্ন আসে না।